কে অসাম্প্রদায়িক, কারা ধর্মনিরপেক্ষ - তৈমূর আলম খন্দকার - Iqbal Hussein Baltu

 Iqbal Hussein Baltu

ধর্ম দিলো পূর্ণতা, পশু হলো স্বাধীন চেতা।

কে অসাম্প্রদায়িক, কারা ধর্মনিরপেক্ষ - তৈমূর আলম খন্দকার

Share This
কে অসাম্প্রদায়িক, কারা ধর্মনিরপেক্ষ?

ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোল্ড থেকে অর্থ পাচার, সরকার কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক বেসরকারি ব্যাংক লুট, অর্থমন্ত্রীর অঙ্ক কষতে ভুল, জনগণের ওপর নানাবিধ করের বোঝা প্রভৃতি কেলেঙ্কারি যখন জনগণকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সে সময়ে হাওর, বিল, শহররক্ষা বাঁধ ভাঙন, অন্য দিকে বন্ধুপ্রতিম দেশের গজলডোবা বাঁধসহ সব বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় বন্যার পানিতে প্লাবিত দেশ ও জাতি। মন্ত্রী, এমপিরা নয় গরিব খেটে খাওয়া মানুষ যে চালের ভাত খায় তা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 সরকারি দল বলছে পর্যাপ্ত রিলিফ বানভাসি মানুষকে দেয়া হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্তরা বলছে আমরা রিলিফের দেখা পাইনি। টিভি সাক্ষাৎকারে যখন দুর্গত এলাকার লোকের সাক্ষাৎকার শোনা যায় তখন কি দেশবাসীর সফেদ পোশাকি মন্ত্রীদের মিষ্টি ভাষণে পেট ভরে? আন্তর্জাতিক নদী মেইনটেইন করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে। দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের ওপর দিয়ে বহমান নদীতে কোনো রাষ্ট্র এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না, যাতে পাশের রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আন্তর্জাতিক নদীসংক্রান্ত চুক্তি পৃথিবীতে অনেক হয়েছে, যেমন- ÔHav Varilla Treaty’ 1903, The Convention of Constantionble’ 1888, Geneva Convention’ 1958, Anglo-French Fisheries Convention’ 1839, The Canada I’M Alone’ 1935, The Hague Convention’ 1930 প্রভৃতি অনেক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সিদ্ধান্ত হয় যে, আন্তর্জাতিকভাবে বহমান কোনো নদীর ওপর কোনো রাষ্ট্র এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে না, যাতে অন্য রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানে ১৯৫৮ সালের জেনেভা কনভেনশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেখানে ভারত-পাকিস্তানসহ পৃথিবীর ৮৬টি রাষ্ট্র অনুরূপ ঐকমত্য পোষণ করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, শুধু গায়ের জোরে বাংলাদেশ অংশে বহমান আন্তর্জাতিক নদী বিষয়ে ভারত কোনো কনভেনশনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেনি; বরং বন্ধুত্বের নামে স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেটাই বাংলাদেশ মেনে নিচ্ছে নিবিড়ে, নিভৃতে শুধু ভারতের সমর্থনের প্রত্যাশায়। বাংলাদেশের এ বন্যা আজ ভারতের সৃষ্টি, যা আমাদের একটি কৃত্রিম সঙ্কটে মোকাবেলা করতে হচ্ছে, প্রাকৃতিকের চেয়ে কৃত্রিমতাই এখানে দৃশ্যমান। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন ছিল।

পাক-হানাদারদের বর্বরতাই এ প্রয়োজনকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের অযাচিত স্বার্থকে রক্ষা করতে হবে (!) বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে আমেরিকা যখন সপ্তম নৌবহর পাঠায়, তখন রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। এর মূল কারণ প্রতিবেশী রাশিয়া এতদাঞ্চলে আমেরিকার শক্তি প্রদর্শনকে সমর্থন জানাতে পারেনি। অতএব, যে যার স্বার্থে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছে, তাই বাংলাদেশ এখন সবার স্বার্থে বিশেষ করে ভারতের স্বার্থে নগ্নভাবে যে রকম ব্যবহৃত হচ্ছে, তা হতে পারে না, সার্র্বভৌমিকতার স্বার্থে এবং জননিরাপত্তার প্রয়োজনে। আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে- ‘জয়শ্রী রাম’, ‘জয়মাতা কি’ সেøাগান দিতে রাজি না হওয়ায় কাশ্মিরের এক মসজিদের ইমামকে নির্যাতন করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরংয়ের সদস্যরা। কাশ্মিরে অমরনাথে যাত্রীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত ১২ জুলাই বজরং সদস্যরা মিছিল করে। মিছিলের সময় তারা হিসারের জামে মসজিদের ইমামকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে বাইরে বের করে আনে। সেখানে তারা ইমামকে ‘জয়শ্রী রাম’, ‘জয়মাতা কি’ সেøাগান উচ্চারণ করতে বলে। কিন্তু ইমাম সাহেব তা না করায় তাকে মারধর করা হয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ৩০ বছর বয়সী মুহাম্মদ হারুন তার ওপর হওয়া বর্বরোচিত আচরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, বজরং দলের কর্মীরা আমাকে মসজিদের ভেতর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে। তারপর তারা আমাকে জোর করে ‘জয়শ্রী রাম’, ‘জয়মাতা কি’ সেøাগানগুলো উচ্চারণ করতে বলে।

 ভারত নিজেকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে। এ দাবিকে সামনে রেখেই সরকারি ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশে ‘সাম্প্রদায়িকতার’ মূল উৎপাটন করতে গিয়ে ধর্মীয় চিন্তাচেতনা থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য মোট জনগোষ্ঠীর প্রাণপ্রিয় ধর্ম ‘ইসলামের’ বিরুদ্ধে নগ্নভাবে উসকানিমূলক বলে যাচ্ছে এবং এটাকেই তারা প্রগতি ও আধুনিকতা মনে করে। এভাবেই একটি স্বার্থান্বেষী মহল সচেতনভাবে ধর্মকে জড়িয়ে একটা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত। ভারতে সৃষ্ট বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে দাবি তুলেছে। তাদের বক্তব্য মতে, আওয়ামী লীগের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন কেন হচ্ছে? প্রকৃত পক্ষে কোনো বিষয় নিয়ে রহিম যখন যদুকে পেটায় তখন এটাকে সাম্প্রদায়িকতা বানানো হয় এবং একই বিষয় নিয়ে যদু যখন মধুকে পেটায় তখন বুদ্ধিজীবীরা সাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পান না।

সাম্প্রদায়িকতার ব্যাখ্যার মধ্যে ‘মতলবি’ চিন্তাধারা ঢুকে পড়েছে। সেখানে একমাত্র মুসলমান ও ইসলাম ধর্মকে কিভাবে দায়ী করা যায় সেটাই এখন টার্গেট। সভ্য দেশ বলে দাবিদার লন্ডনে ইসলাম ঘোষিত পর্দা অর্থাৎ মাথায় হিজাব পরার কারণে মুসলমান মেয়েদের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তো বকধর্মী সাধুদের কোনো ‘রা’ নেই। গত ১৬ জুলাই লন্ডনের ব্রিকার স্ট্রিটে আনিসো আ: কাদির নামে নারীর হিজাব ধরে টান দেয়া হয়; মেয়েটি বাধা দিলে তার প্রতি এসিড নিক্ষেপ করে। লন্ডনে মুসলমানদের ওপর এসিড নিক্ষেপ নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ এ নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা দেখায়নি। গত বছর মে মাসে লন্ডনের লুটন এলাকায় ৩০ বছর বয়স্ক এক মুসলমান যুবকের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সে বিষয়ে পুলিশ কোনো ভূমিকা না রাখায় আহত যুবক হামলাকারীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য নিজেই ১০ হাজার পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কথায় কথায় হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে সোচ্চার হয়, সেই অনুপাতে মুসলমানদের ওপর যখন হামলা হয় তখন মুসলমান রাষ্ট্রগুলো মুখ বন্ধ করে নিশ্চুপ থাকে।

 এর কারণ বোধগম্য নয়। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ এটা বৌদ্ধদের দৈব বাণী। অথচ এই বৌদ্ধদের দ্বারাই একমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছে; তখন বাংলাদেশসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো সাহায্য করা তো দূরের কথা, বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করেনি, একমাত্র মালয়েশিয়া ছাড়া। সব দিক থেকে মুসলমানরাই হামলার শিকার। বাংলাদেশ ভারত দ্বারা বিভিন্ন পন্থায় শোষণের শিকার। ভারত নিজে একটি অতিমাত্রায় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও কাগজ-কলমে তারা অসাম্প্রদায়িক এবং এ কারণেই ভারতের সেবাদাস হতে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ যারা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রধান পুরোধা মনে করে মুসলমান নিধনের বিষয়ে তাদের কোনো প্রতিবাদ নেই। অথচ ভারত যে একটি ‘অসাম্প্রদায়িক’ রাষ্ট্র নয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের কর্মতৎপরতা এবং রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। ভারতের স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অন্যতম নীতিনির্ধারক গোলওয়ালকর তার লেখা “WE ARE OUR NATIONHOOD DEFIEND” বইতে লিখেছেন “The foreign races in Hindusthan must either adopt the Hindu culture and language, must learn to respect and hold in reverence Hindu religion, must entertain no idea but those of the glorification of the Hindu race and culture, i.e., of the Hindu nation and must lose their separate existence to merge in the Hindu race, or may stay in the country, wholly subordinated to the Hindu Nation, claiming nothing, deserving no privileges, far less any preferential treatment not even citizen’s rights. There is, at least, should be, no other course for them to adopt. We are an old nation; let us deal, as old nations ought to and do deal, with the foreign races, who have chosen to live in our country.” (অর্থাৎ হিন্দুস্তানে বসবাসকারী বিদেশী জাতি সম্প্রদায়ের লোকদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষা, অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং ধারণ করতে হবে হিন্দু ধর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতির অর্থাৎ হিন্দু জাতিকে মহিমান্বিত করার আচার ছাড়া সাদরে অন্য কোনো ধারণাচার পালন করতে পারবে না, তাদেরকে অবশ্যই তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বিলোপ করে মিশে যেতে হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে। তা না হলে তাদেরকে এ দেশে থাকতে হবে হিন্দু জাতির পুরোপুরি অধীনস্থ হয়ে, যেখানে এরা দাবি করতে পারবে না কিছুই, এরা কোনো অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য হবে না, বিন্দুমাত্র অগ্রাধিকার আচরণ পাবে না এমনকি পাবে না কোনো নাগরিক অধিকারও।

তাদের জন্য অন্য কোনো বিকল্পও থাকবে না। আমরা একটি পুরনো জাতি; যারা দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি পুরনো জাতি হিসেবে আমাদের তাদের সাথে বিদেশী হিসেবেই আচরণ করা উচিত।) পৃথিবীতে অনেক ধর্ম আছে যার মধ্যে বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয়, বৌদ্ধরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে বলে না, ইহুদিরা খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে কোনো অপবাদ দেয় না, খ্রিষ্টানরা বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে বলে না। কিন্তু সব ধর্মাবলম্বীর একমাত্র অভিযোগ মুসলমানদের বিরুদ্ধে। বিশ্বব্যাপী মুসলমানরাই একমাত্র টার্গেট। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর এ মর্মে বোধোদয় হচ্ছে না। লেখক : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা taimuralamkhandaker@gmail.com   Jom daftar sekarang Adakah anda sedang mencari pendapatan yang lumayan dengan terma-terma anda tersendiri... আরও জানুন  অন্যান্য সংবাদ দার্জিলিংয়ে গোর্খা হাঙ্গামা কে অসাম্প্রদায়িক, কারা ধর্মনিরপেক্ষ! ধনাঢ্য ছাত্র নেতৃত্ব পুঁজিবাদের অমানবিকতা ও ইসলামি অর্থনীতি সুগার ড্যাডি এবং মিডিয়া বেবি রাজনীতিতে খালেদা জিয়া কতটা প্রাসঙ্গিক? আনান কমিশনের রাখাইন রিপোর্ট নির্বাচন, নিরাপত্তা ও সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে-১ কলঙ্কিত নির্বাচনের রোডম্যাপ যেন না হয় জনমত যাচাইয়ে গণভোট কেন নয়?   উপরে ডেস্কটপ প্রচ্ছদ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি আইন ও বিচার অপরাধ ঘটনা-দুর্ঘটনা শিক্ষা প্রশাসন সংসদ সংগঠন কূটনীতি বিবিধ দেশ আন্তর্জাতিক উপসম্পাদকীয় মতামত খেলা লাইফস্টাইল অন্যান্য বিনোদন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ধর্ম-দর্শন নারী পরিবেশ জবস অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্রবাসের খবর ফিচার পাঠক গ্যালারি ভ্রমণ সাহিত্য আজকের পত্রিকা ফিচার আগডুম বাগডুম অবকাশ থেরাপি সাতরঙ নারী নিরাময় প্রিয়জন প্রযুক্তি দিগন্ত কর্পোরেট দিগন্ত দিগন্ত সাহিত্য চট্টলা সংবাদ ইসলামী দিগন্ত দেশ মহাদেশ দিগন্ত জবস নিত্যদিন অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য সম্পাদ।

সূত্র- নয়া দিগন্ত 

No comments:

Post a Comment

Pages