নিজের শ্রম, শক্তি ও মেধা দিয়ে টাকা উপার্জন করা যায় ,অঢেল ধন- সম্পদের মালিক হওয়া যায় । সেই উপার্জিত সম্পাদ বা টাকা ইচ্ছামত খরচ করা যায়। টাকা দিয়ে স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করে, ইচ্ছে মত সাজসজ্জার করে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা মুহুর্তে ব্যাপার। তৈরীকৃত বাড়িতে সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করতে, মনের মত একটি রূপসী নারীকে জীবন সঙ্গিনী করা সম্ভব, যদি থাকে টাকা ।
মার্কেটে গিয়ে দামী গাড়ি খরিদ করা যায়। বড় শপিংমলে গিয়ে উন্নত কাপড়ের তৈরী উন্নতমানের জামা -প্যান্ট পাইজামা- পানজাবি খরিদ করে মনের সোহাগ পূর্ণ করা হয় । টাকা দিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব কিছু কিনতে পাওয়া যায়। মনের চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করা সম্ভব ।
তাহলে এই টাকা-ই কি জীবনের সব কিছু ? তবে সফল ব্যক্তি কি সেই, যে টাকা- পয়সা, ধন - সম্পদ বেশি উপার্জন করেছে?
একজন মানুষকে টাকা উপার্জন করে ধনী হতে কমপক্ষে জীবনে ৪৫ থেকে ৫০ বছর লেগে যাবে । মানুষ পৃথিবীতে কত বছরই বা বেঁচে থাকবে? দেহ জীবন এক সময় শেষ হয়ে যাবে । তারপর এই ধন-সম্পদ কে খাবে? নিজের সন্তান । সারা জীবনে ধরে কষ্ট করে গড়ে তোলা এই সম্পদের মালিক হবে পৃথিবীর সব থেকে প্রিয় নিজের সন্তান- সন্তানাদি।
কিন্তু চাইলে কি আর নিজের সন্তানকে নিজের বাড়িকে যেভাবে সাজিয়ে তুলেছি সেভাবে গড়া যায়? মার্কেট থেকে মনের মত যে গাড়িটা ক্রয় করেছি তার মত আর টাকা দিয়ে ছেলেকে গড়ে তোলা কি সম্ভব ? জীবনে শ্রম, শক্তি ও মেধা দিয়ে তিল তিল করে যে ধন- সম্পদ গড়ে তুলা হয়েছে, যদি শিশুকাল থেকে সন্তানের জন্য এই তিন শক্তি প্রয়োগ করা না হয়, তবে সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করে কি গড়ে তোলা যাবে?
আপনি সারা জীবন ধন- সম্পদের পিছনে ছুটে চলছেন। কিন্ত আপনার সন্তান যদি হয় ড্রাগ আসক্ত , আপনার সন্তান যদি হয় একজন সন্ত্রাসী, যদি সে হয় ড্রাগের ব্যবসায়ী, আপনার সন্তান হয়ে উঠল এক উচ্চাভিলাষী। আপনার গড়া সম্পদ দিয়ে যদি সমাজের শান্তি - শৃঙ্খলা যদি নষ্ট করে। আপনার গড়া সম্পদ যদি বামপন্থী নাস্তিকদের জন্য ব্যবহার করে? ইসলাম ও মামুষের ক্ষতি সাধন করে? তবে আপনার এই সম্পদ দেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
কত কষ্টে উপার্জিত এই ধন- সম্পদের কি মূল্য আছে? পরকালের কথা বাদ দিয়েছি, মৃত্যুর পর আপনি এই সমাজের কাছে কি হিসেবে চিহ্নিত হবেন? চিন্তা করেছে? আর আপনার কত কষ্টে গড়ে তোলা এ ধন-সম্পদ তার কাছে শেষ করতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক বছর। সম্পদ উপার্জন করে কি আপনি সফল ব্যক্তি?
আমার একটি কথা মনে পড়ে - আমি কুষ্টিয়ায় আবুল খায়ের টোবাকতে চাকরি করতাম। একদিন কথার প্রসঙ্গে রিজুনাল স্যার বলছিলো এভাবে, "আমি তখন আকিজ গ্রুপের ঢাকা টোবাকতে চাকরি করতাম, আমাদের একদিন অফিসের মিটিং আজিজ সাহেব একটি কথার প্রসঙ্গে বললেন ; "একসময় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত সিগারেট কম্পানি ছিলো " পাইলট ও প্রসিডেন্ট "। এই কম্পানি যে ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করে গড়ে তুলেন তিনি মারা যান। আমি মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে দেখতে যায়। একদিন তার ছেলে আমার অফিসে আসলো আমি তাকে দেখলাম একটি গেঞ্জি , জিন্সের প্যান্ট, স্বর্ণের হার, স্বর্ণের আংটি পরিধান করা । আমি তাকে দেখে বলেছিলাম তার বাবা প্রতিষ্ঠিত কম্পানি, সে ধ্বংস করে ফেবে। "
আমার স্যার এরপরে বললোন "আকিজ সাহেব আজ নাই কিন্তু তিনি শুধু পরিশ্রম করে ধন- সম্পদ গড়ে তুলেন নাই তিনি তার সন্তানদেরও গড়ে তুলেছেন"।
একজন কৃষক রৌদ্র, বৃষ্টিতে কঠোর পরিশ্রম করে দু'বেলা দু'মুঠ ভাত খেয়ে তার সন্তানকে সু শিক্ষায় শিক্ষিত করে।সেই সন্তান এই সমাজ দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বলেয় আনবে। এই সমাজ দেশও জাতি তার কাছে ঋৃণী। ঐ কৃষক-ই সফল। আপর দিকে বিত্তবানের বিপদগামী সন্তানের দ্বারা এই সমাজ, মানুষ ও দেশ ক্ষতি সাধিত হবে। তার দ্বারা সমাজ উপকৃত হবেনা। ঔ অর্থ আর সম্পদ সফলতা মাফকাঠি হতে পারেনা।
সেই ব্যক্তি কখনোই সফল নয়, যে তার সন্তানকে সঠিকভাবে গড়তে না পারবে। সেই ব্যক্তি-ই সফল যে তার সন্তানকে আদর্শিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
No comments:
Post a Comment