বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামির নেতাদের বক্তব্য থেকে পাওয়া যায় তারা কেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে ছিল এবং তাদের কথা কতো টুকু যুক্তিযুক্ত।
৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ও ইসলামপন্থিদের ভারতে যাওয়ার কোন পথই কি খোলা রাখা হয়ে ছিলো ? ইতিহাস সাক্ষী দেয় মাওলানা ভাসানী, কমরেড ফরহাদ, কাজী জাফর আহম্মদ, রাশেদ খান মেনন প্রমুখ যেসব আ- আওয়ামীলীগ অথচ যথার্থ অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল নেতারা ভারতে গিয়ে ছিলেন, তাদের এবং তাদের কর্মীদের প্রতি কি আচারণ করেছিলো আওয়ামী- ভারত।
সরকারে কোন স্তরে, মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে কোন পর্যায়ে কিংবা সিন্ধান্ত গ্রহণে কোন প্রক্রিয়াতে আওয়ামীলীগ জামায়াতকে অন্তরভুক্তি করেনি। মাওলানা ভাসানীকে তো কার্যত ; আন্তরীণাবন্ধ করেই রাখা হয়ে ছিলো, অথচ তিনি ছিলেন রাজনীতি অঙ্গনের স্বাধীনতার প্রথম স্পষ্ট প্রবক্তা। জামায়াতের নেতারা বলছিলো- প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপক্ষ নেতাদেরই যেখানে হালে পানি পেতে দেয়নি, সেখানে কুরআন সুন্মহ শাসন চাই এমন টুপি- দাড়িধারী ব্যক্তিরা ভারতে গিয়ে উঠলে তাদের পরিণতি কি হতো ?
জামায়াত ও ইসলামি দল গুলোকে আওয়ামীলীগ- ভারত কি আদৌ বুকে টেনে নিতেন ? মুক্তিবাহিনীতে স্থান দিতেন? ভারতের হিন্দু সরকারও কি তাদের আদৌ আশ্রায়,অস্ত্র ও ট্রেনিং দিতেন? ইসলামপন্থীদের ভারতের মাটিতে পেলে আওয়ামী - ভারত তাদের এক মুহুর্ত বরদাস্ত করতেননা। আশ্রায়, অস্ত্র ও ট্রেনিং দেওয়া তো দূরের কথা আওয়ামী ও দাদাবাবুরা মিলে জামায়াত ও ইসলামপন্থিদের দেখা মাত্রই কচুকাটা করে ছাড়তো।
এমতাবস্থায়, প্রাণ বাচাতে হলে ইসলামপন্থীদের এদেশে থেকে যাওয়া ছাড়া অপর কোন গন্তব্য সত্যিই ছিলো কি? রাজাকার আলবদরদের বর্বরতা ও হানাদারদের দালালির অতি ঘৃণ্য কর্মকান্ডের কথা সর্বাংশে স্বীকার করেও অনেকেই মনে করে যে, ইসলামপন্থীদের প্রতি আওয়ামী ও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের অন্ধ আক্রোশের কারণেই এদের অনেকের পক্ষে ইচ্ছা করলেও ভারতে যাওয়া সম্ভবপর ছিলোনা। রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত কাউকেই ইয়াহিয়া- ভুট্রো চক্র নিরপেক্ষ থাকতে দিছিলোনা। রাজাকার আলবদরদের ক্ষমতার অযোগ্য ঘৃণ্য ভুমিকার পাশাপাশি এই দিকটিও কি কমবেশি সত্য নয়?
৭১ সনে জামায়াত ইসলাম যে তিনটি যুক্তিতে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা করেছিল :-
১/- ভারতকেন্দ্রিক ;
২/- ভারতভিত্তিক ও ;
৩/- ভারতনিয়ন্ত্রিত ;
প্রথম:-
জামায়াতের ভয় ছিলো যে, বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলে এতদঞ্চলে ইসলামের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয় :-
জামায়াতের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো যে পাকিস্তান ইসলামের দেশ সুতরাং আল্লাহু এদের কে ভাঙ্গতে দিবেনা।
তৃতীয়:-
তারা আশংকা করে ছিলো যে, ভারতের আশ্রয়, সহায়তা, ট্রেনিং ও নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত যুদ্ধের ফলে অর্জিত বাংলাদেশ কার্যত ; ভারতীয় আধীপত্যবাদ ও রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক স্বার্থেই লীলাভূমিতে পরিণত হবে।
বলাবাহুল্য ;
জামায়াত ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় ধারণা কি সত্য বলে প্রমাণীত হয়েছিলো ? পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এতদঞ্চালে ইসলাম আদৌ বিপন্ন হয়নি ; বরং ইসলামের প্রতি মানুষের নিষ্ঠই আরোও বৃদ্ধি পেয়েছে। অখন্ড পাকিস্তানে রক্ষ করার আল্লাহ্ আদৌ ইচ্ছা ছিলোনা এটাও প্রমাণিত। কিন্তু তাদের তৃতীয় আশংকাটি ? সেটাও কি পুরপুরি ভূল প্রমাণিত হয়েছে ?
বিজয়ের পর বাংলাদেশ সরকারকেই বাংলাদেশে আসতে না দেওয়া, ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট, আন্তর্জাতিক পাটের বাজার দখল, ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীসহ ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সেনাকে বাংলাদেশের মতামত তোয়াক্কা না কর পাকিস্তানের হাতে সমর্পণ, বাংলাদেশের বাজেট বাংলাদেশে পার্লামেন্টে পেশ হওয়ার আগেই আকাশবাণী দিল্লি কেন্দ্র থেকে প্রচার, তালপট্টি দ্বিপ দখল, গঙ্গা ও তিস্তার বাধ নির্মাণে একতরফা পানি প্রত্যহার, বাংলাদেশে ভারতের বৈধ- অবৈধ পণ্যের একচেটিয়া
বাজার রুপান্তর, বাংলাদেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে আমদানিকৃত পণ্য ভারতের পাচারের ব্যবস্থা, অপারেশন পুশব্যাক, বঙ্গসেনা- জঙ্গি ও শান্তিবাহিনী ইত্যাদি সৃষ্টি ও সজত্নে লালন, বেপরোয়া পণ্য আগ্রাসন, বাংলাদেশের সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দাতা, বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র প্রমাণের অপপ্রয়াস, বিভিন্ন সীমান্তে এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বি এস এফ এর নিত্য হামলা ইত্যাদি কি একথা প্রমাণ করেনা যে ৭১ জামায়াত ভারত সম্পর্কিত ভয় ও আশংকা সম্পূর্ণ অমূলক ছিলো না ? বামপন্থি বা কমোনিষ্ট সংগঠন সমূহ অনেকেও কি একই কারণে ভারত গমন থেকে বিরত থাকেনি? ভারতীয় ভূমিকার বিরোধীতা করেনি যেমন- মুহা: তোয়াহা, আবদু হক, সিরাজ সিকদার প্রমুখের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ?
৭২ পরবর্তী সরকার ও ৯৬/২০০১ আর ২০০৮ থেকে ২০১৭ সনে সরকারের আমল বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট যে, তার কি ভারতের ছিকলে বন্ধি হয়ে নাকি স্বাধীন ভাবে দেশ পরিচারণ করেছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment